জহির শাহ্, বিজয়নগর প্রতিনিধিঃ
শহরের কোলাহল আর ডিজিটাল পর্দার আড়ালে যখন হারিয়ে যাচ্ছে মাঠের হাসি-খেলা, তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের আদমপুর গ্রামে যেন ফিরে এলো জীবনের প্রাণস্পন্দন। APL ফাইনাল ২০২৫-এর মঞ্চে এই গ্রাম পরিণত হলো এক উৎসবের কেন্দ্রবিন্দুতে, যেখানে ক্রিকেট শুধু খেলা নয়, একতার উৎসব, তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন আর গ্রামীণ ঐতিহ্যের জয়গান। মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় পত্তন ইউনিয়নের এই মাঠে স্থানীয় তরুণ মাহিদ মিয়া ও সাইফুল ভুইয়ার অক্লান্ত উদ্যোগে মঞ্চস্থ হলো এক মিনি বিশ্বকাপের আদলে গড়া ক্রিকেট মহোৎসব।
মাঠে মুখোমুখি হয়েছিল আদমপুর ক্রিকেট একাদশ ও লক্ষ্মীপুর ক্রিকেট একাদশ। খেলা শুরু থেকেই উত্তেজনার পারদ ছিল আকাশচুম্বী। দর্শকদের উচ্ছ্বাস আর উৎকণ্ঠার মাঝে আদমপুর ক্রিকেট একাদশ ২৭ রানের ব্যবধানে লক্ষ্মীপুরকে পরাজিত করে বিজয়ের পতাকা উড়িয়েছে। মাঠের চারপাশে তখন শুধু করতালির ঝড় আর ‘আদমপুর! আদমপুর!’ ধ্বনি। মনে হচ্ছিল, যেন মাটির বুকও এই আনন্দে সামিল হয়ে কেঁপে উঠেছে।
এই মহোৎসবের প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক মেম্বার আব্দুল হেকিম ভুইয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাহরাইন ও সৌদি আরবের প্রবাসী ব্যক্তিত্বসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা, যাঁদের উপস্থিতি এই আয়োজনকে আরও মর্যাদাশীল করে তুলেছিল। তবে এই উৎসবের প্রকৃত কাণ্ডারি ছিলেন মাহিদ মিয়া ও সাইফুল ভুইয়া—দুই তরুণ, যাঁদের দূরদর্শী নেতৃত্ব আর অদম্য উৎসাহ গ্রামের প্রতিটি প্রাণে ছড়িয়ে দিয়েছে ক্রীড়ার নতুন প্রেরণা।
ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন আরমান ও ইমন ভুইয়া। তাঁদের নিরপেক্ষতা, পেশাদারিত্ব আর শৃঙ্খলার মাধ্যমে খেলাটি পরিণত হয়েছিল একটি নিখুঁত ক্রীড়া উৎসবে। এই ম্যাচ শুধু দুই দলের লড়াই ছিল না; এটি ছিল গ্রামবাংলার হারানো ক্রীড়া-সংস্কৃতির পুনর্জাগরণ, তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নের প্রতিফলন এবং সম্প্রদায়ের ঐক্যের এক অমর গল্প। এই আয়োজন প্রমাণ করল, প্রযুক্তির যুগেও মাঠের ধুলোয় মিশে থাকা স্বপ্ন আর একতা এখনও ফিরে আসতে পারে—যদি থাকে মনের জোর আর সম্মিলিত প্রয়াস।
আদমপুরের এই APL ফাইনাল ছিল শুধু একটি ক্রিকেট ম্যাচ নয়, এটি ছিল গ্রামীণ বাংলার হৃৎস্পন্দন, যেখানে মাঠ, মানুষ আর খেলা মিলে রচনা করল এক অবিস্মরণীয় উৎসবের গল্প।